
ইলিশ মাছ
ইলিশ শুধু একটি মাছ নয়, এটি বাঙালির গর্বের প্রতীক। বিবাহ অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে , জামাই ষষ্ঠী , পুজো-পার্বণে ইলিশ ছাড়া বাঙালি অসম্পূর্ণ। পশ্চিমবঙ্গের দিঘাতে ভালো ইলিশ ধরা পড়ে। এই মাছের স্বাদ, গন্ধ এবং কোমল মাংসের জন্য মানুষ প্রস্তুত থাকে উচ্চ দাম দিয়ে ক্রয় করার জন্য।
ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ উঠল দিঘায়
বাংলার নদী-নালা, খাল-বিল আর মোহনায় ইলিশের আগমন শুধু মাছের ঝাঁক নয়, এটি বাঙালির আবেগ, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই বছরও দিঘায় ইলিশের ধুম পড়েছে। মাছের ঝাঁক দেখে মৎস্যজীবীদের মুখে হাসি ফুটেছে, আর বাজারে ইলিশের চাহিদা ও দাম নিয়ে সমালোচনা চলছে। ১৮০০ গ্রামের একজোড়া ইলিশ বিক্রি হয়েছে আকর্ষণীয় দামে। কিন্তু এই হ্যাঁ এই ইলিশ শিকার করে বাজারজাত করার পিছনে রয়েছে দীর্ঘ গল্প —প্রকৃতির উপর নির্ভরতা, মৎস্যজীবীদের পরিশ্রম, এবং বাঙালির সুস্বাদু খাবারের প্রতি অনুরাগ ও অফুরন্ত ভালোবাসা।

কেন ইলিশের দাম এত বেশি?
১. প্রাকৃতিক প্রজনন ও মাইগ্রেশন:
ইলিশ সামুদ্রিক মাছ, কিন্তু ডিম পাড়ার জন্য নদীতে আসে। জালে ধরা পড়ার আগে যদি ইলিশ ডিম ছাড়তে পারে, তাহলে পরবর্তী বছরেও ইলিশের অনেক Stock বজায় থাকে। কিন্তু অত্যধিক মাছ ধরা ও নদীদূষণের কারণে ইলিশের প্রাকৃতিক প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে,তাই ইলিশ বংশবিস্তার করতে পারছে না যা দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে ।
২. সরকারি নিষেধাজ্ঞা:
ইলিশের প্রজননকালে (সাধারণত অক্টোবর-নভেম্বর) সরকার জেলেদের ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করে, যাতে জাটকা (ছোট ইলিশ) বড় হতে পারে। এই সময়ে বাজারে ইলিশের সরবরাহ কমে যায়, তাই পাওয়া যায় না ও দাম বেড়ে যায়
৩. চাহিদা ও স্ট্যাটাস সিম্বল:
ইলিশ এখন শুধু খাদ্য নয়, এটি একটি সামাজিক স্ট্যাটাস সিম্বলে পরিণত হয়েছে। বড় আকারের ইলিশ কেনা অনেকের জন্য প্রেস্টিজের বিষয়। এখন সবাই status রক্ষা করার জন্য ইলিশ মাছ বাজার থেকে কিনে আনে।
১৮০০ গ্রামের একজোড়া ইলিশের দাম কত?
এই মৌসুমে দিঘায় ধরা পড়া ১৮০০ গ্রাম (১.৮ কেজি) ওজনের একজোড়া ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১৫,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকায়। দাম নির্ভর করে মাছের গুণমান বাজার চাহিদা পরিবহন ব্যবস্থা প্রক্রিয়াকরণ সুবিধা ও বিপণন কৌশল। কলকাতা বা অন্যান্য শহুরে বাজারে এই মাছের দাম আরও বেশি হতে পারে, বিশেষ করে যদি তা সরাসরি মৎস্যজীবীদের কাছ থেকে না কিনে মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে আসে।সরাসরি যেখান থেকে মাছ ধরা হয় সেখান থেকে কিনলে একটু হয়ত বাজার থেকে কমটাকায় পাওয়া যেতে পারে
মৎস্যজীবীদের মুখে হাসি, কিন্তু প্রতিযোগিতা ও কম নয়
ইলিশ ধরা পড়ার খবরে মৎস্যজীবীদের মুখে হাসি ফুটলেও, তাদের জীবনযুদ্ধ সহজ নয়। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙন, জাল ও নৌকার খরচ, এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের শোষণ তাদের উপার্জনকে অনিশ্চিত করে তোলে। অনেক সময় সমুদ্রে গিয়ে বিপদে পড়েন জেলেরা, তবুও নিচের সন্ধানে সবসময় ফিরে যান ও ইলিশ নিয়ে বাড়ি ফেরে জেলেরা ।
ইলিশ বাঁচাতে আমাদের করণীয়
- জাটকা নিধন বন্ধ করা।
- ছোট ইলিশ ধরা বন্ধ করতে হবে, যাতে তারা বড় হয়ে প্রজননে অংশ নিতে পারে ও মা ইলিশ ধরা যাবে না যাতে আমরা বড় ইলিশ পেতে পারি।
- নদীদূষণ কমানো: প্লাস্টিক বর্জ্য ও শিল্পবর্জ্য নদীতে ফেলা বন্ধ করতে হবে।যাতে মাছ বেশি করে বংশবিস্তার করতে পারে ।
- ইলিশের প্রাকৃতিক আবাস সংরক্ষণ– নদীর নাম কথা বজায় রাখতে হবে। সুন্দরবন এলাকায় ইলিশের প্রজনন ক্ষমতা ঠিক রাখতে হবে।
- সচেতনতা বৃদ্ধি- জেলেদেরকে সচেতন করতে হবে তারা যেনো ছোট ইলিশ ধরা বন্ধ করে। তাছাড়া তারা যেন ডিম সম্পন্য ইলিশ না ধরে।
ইলিশের প্রজননকালে এই মাছ কম কেনা, বা বিকল্প মাছ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে যাতে সব সময় ইলিশ মাছ পাওয়া যায় ও দামও সীমিত থাকে ।
উপসংহার
ইলিশ শুধু একটি মাছ নয়, এটি বাংলার প্রকৃতি, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। মৎস্যজীবীদের পরিশ্রম ও প্রকৃতির উপর নির্ভরতা এই মাছকে আরও মূল্যবান করে তোলে। প্রতিটি ইলিশই প্রকৃতির একটি উপহার। কিন্তু এই উপহার চিরস্থায়ী করতে হলে আমাদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে। জাটকা নিধন বন্ধ, প্লাস্টিক দূষণ কমানো এবং টেকসই মৎস্য চাষের দিকে ঝুঁকলে আগামী দিনেও ইলিশের সমৃদ্ধি বজায় থাকবে। মনে রাখবেন, আজ আমরা ইলিশ বাঁচালে, কাল ইলিশ আমাদের বাঁচাবে পরের প্রজন্ম ও ইলীশ খেতে পারবে ।